সাম্প্রতি চলমান ইজরাইল-গাজা সংঘর্ষে রাফা বোর্ডারে আজ হঠাৎ মিশর ও ইজরায়েলি সেনার মধ্যে গুলি ফায়ার ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্তে ইসরায়েলি ও মিশরীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে এবং ইসরায়েল এই ঘটনার তদন্ত করছে। হিব্রু চ্যানেল ১৪ জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্তে মিশরীয় সেনারা ইসরায়েলি সৈন্যদের উপর গুলি চালিয়েছিল, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পরে জানা যায় যে রাফা বোর্ডারে এই ঘটনায় একজন মিশরীর সৈনিকের ইজরায়েলি গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। যা ইজরাইল-গাজা সংঘর্ষ কে আরো এক জটিল অবস্থায় নিয়ে চলে গেছে।
Table of Contents
রাফা বোর্ডারে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে তদন্ত
রাফাহ সীমান্ত এলাকার কাছে ইসরায়েলি ও মিশরীয় সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে এক মিশরীয় সৈন্য নিহত হওয়ায় উভয় দেশের সেনাবাহিনী বর্তমানে এই ঘটনার তদন্ত করছে। ইসরায়েলি মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে গুলি বিনিময় হয়েছিল, তবে কোনো ইসরায়েলি সৈন্যের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
গত তিন সপ্তাহ আগে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান হিসেবে রাফাহ সীমান্তের গাজার দিকটি ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিস্তিনিদের শক্তিশালী সমর্থক মিশর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং এর ফলে বেসামরিক হতাহতের নিন্দা জানিয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
৪৫ বছর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম আরব দেশ মিশর। শান্তিচুক্তি থাকা সত্ত্বেও, দুই দেশের সম্পর্ক প্রায়ই উত্তপ্ত ছিল। তবুও, মিশরীয় ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ বিরল।
রাফা বোর্ডারে কাছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী
রাফা বোর্ডারে গুলির ঘটনাটির ঘটার কয়েক ঘন্টা আগে, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাফাহে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছিল, যা গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে কমপক্ষে ৪৫ জনকে হত্যা করেছে। মিশর ইসরায়েলকে রাফা বোর্ডারে নিরস্ত্র বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, ওই হামলায় দুইজন উচ্চপদস্থ হামাস কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং তারা এই হামলার ফলে বেসামরিক লোকদের ক্ষতির রিপোর্ট পর্যালোচনা করছে।
গাজা অবরোধ ও মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা
ইসরায়েলের মতো, মিশর ২০০৬ সালে হামাস ক্ষমতায় আসার পর থেকে গাজার সঙ্গে তাদের সীমান্ত অবরোধ করেছে। যদিও হামাস মিশরে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত, তবুও মিশর হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ চালু রেখেছে। মিশর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একাধিকবার পরোক্ষ আলোচনায় মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা এবং গাজায় হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা।
গাজার বর্তমান খবর
ইসরায়েলি বিমান হামলায় রাফাহতে ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত: বিশ্বব্যাপী নিন্দা
রাফাহ, গাজার সবচেয়ে দক্ষিণের শহরে, রাফা বোর্ডারের কাছে বাস্তুচ্যুত লোকদের তাঁবুগুলির উপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সির অভিযোগ
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সি ইসরায়েলকে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করার অভিযোগ এনে এই হামলাকে আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রস্তাবগুলির প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন বিশ্ব নেতার প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) গাজাকে “পৃথিবীতে নরক” বলে অভিহিত করেছে, আর একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা এই হামলাকে “গণহত্যা” বলে অভিহিত করে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো এই হামলার বিরোধ করেন ও সিজ ফায়ার করার কথা বলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন যে, ইসরায়েলকে তার রাফাহ আক্রমণ বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় মেনে চলতে হবে। ইসরায়েলের রাফাহতে প্রাণঘাতী হামলার কয়েক ঘন্টা পরই ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরব সমকক্ষদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের প্রতিশ্রুতি
ইসরায়েলের শীর্ষ সামরিক প্রসিকিউটর মেজর-জেনারেল ইফাত টোমার ইয়েরুশালমি এই ঘটনাকে “খুবই গুরুতর” হিসেবে স্বীকার করেছেন এবং সম্পূর্ণ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বেসামরিক লোকদের ক্ষতির জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ঘটনাকে “দুঃখজনক ভুল” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং কারণ নির্ধারণের জন্য তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শী এবং আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি সানাদ দাবি করেছে যে, ক্যাম্পটি ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্য করা হয়েছিল ছিল। ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (PRCS) বলেছে যে, মৃতদের মধ্যে মহিলা ও শিশু রয়েছে, যাদের অনেকেই তাদের তাঁবুর ভেতরে জীবন্ত পুড়ে গেছে। একজন বাসিন্দা বর্ণনা করেছেন যে, হামলার পর তাঁবু এবং মানুষের শরীর গলে যাচ্ছে।
আরো জানুন – অলিম্পিক গেমস : বিশ্ব খেলার উৎসব