দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা, নিরস্ত্র ফিলিপাইনি সৈন্যদের চীনা কোস্ট গার্ডের অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই

From : X / @Oneindia

ফিলিপাইনি সৈন্যদের চীনা কোস্ট গার্ডের সংঘর্ষের বিবরণ

দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে চীনা কোস্ট গার্ডের তলোয়ার, বর্শা ও ছুরি-সজ্জিত সদস্যদের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনি সৈন্যরা খালি হাতে লড়াই করে। ফিলিপাইনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল রোমিও ব্রাউনার এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন এবং চীনা জাহাজগুলির ফিলিপাইনি নৌকাগুলিকে ধাক্কা দিয়ে অস্ত্র দখল করার অভিযোগ করেছেন। সংঘর্ষে এক ফিলিপাইনি সৈন্যের আঙুল হারিয়েছে।

From : X / @wangxh65

চীনের প্রতিক্রিয়া

চীন একথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে তাদের কর্মীরা সংঘর্ষের সময় “সংযত” ছিল। বেইজিং দাবি করেছে যে তাদের কর্মীরা একটি “অবৈধ সরবরাহ পরিবহন” অবরোধের চেষ্টা করছিল। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, “ঘটনাস্থলে চীন কোস্ট গার্ডের আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা পেশাদার এবং সংযত ছিল।” চীনা কোস্ট গার্ড অভিযোগ করেছে যে ফিলিপাইনি সৈন্যরা সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে বিপজ্জনকভাবে চীনা জাহাজের কাছে গিয়েছিল, যার ফলে সংঘর্ষ ঘটে।

বিপজ্জনক সংঘর্ষ ও উত্তেজনা

এই সংঘর্ষটি ঘটেছে যখন ফিলিপাইনি নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড দ্বিতীয় থমাস শোল-এ অবস্থানরত সৈন্যদের কাছে তেল ও রশদ সরবরাহ পৌঁছে দিচ্ছিল। জেনারেল ব্রাউনার উল্লেখ করেছেন যে এটি হল প্রথমবারের মতো চীনা কর্মীদের এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার ঘটনা। তিনি এই ঘটনাটিকে “দস্যুতা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে চীনারা ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ফিলিপাইনি জাহাজের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ ও ধ্বংস করার কোনো অধিকার বা আইনি কর্তৃত্ব নেই।

বিরোধের পটভূমি

দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন বিপজ্জনক সংঘর্ষ হয়েছে কারণ উভয় পক্ষ তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দ্বিতীয় থমাস শোল একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে একটি স্থাপিত ফিলিপাইনি পোস্ট নিয়মিত সরবরাহের প্রয়োজন হয়। চীন এই সরবরাহ মিশনগুলোকে বিভিন্ন বিপজ্জনক কৌশল ব্যবহার করে রোধ করার চেষ্টা করে।

সংঘর্ষের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ফিলিপাইনি পোস্টে সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে, যা বেইজিংকে পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে দেবে। পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে যেকোনো উত্তেজনা চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ হতে পারে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি অনুযায়ী ফিলিপাইনের সুরক্ষা দিতে বাধ্য। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস সতর্ক করেছেন যে চীনের ইচ্ছাকৃত কার্যকলাপের ফলে কোনো ফিলিপাইনি নিহত হলে, ম্যানিলা এটিকে “যুদ্ধের প্রায় শামিল” বলে মনে করবে। তবে জেনারেল ব্রাউনার বলেছেন যে ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য যুদ্ধ বাধানো নয় বরং আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা।

চীন-ফিলিপাইন সংঘাতের ইতিহাস

প্রাথমিক বিরোধ

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে সংঘাত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। এই অঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পদসমৃদ্ধ এলাকাগুলোর মালিকানা নিয়ে উভয় দেশই, পাশাপাশি অন্যান্য দেশও, দাবি করে আসছে। বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু বিভিন্ন শোল, রিফ এবং দ্বীপের উপর তাদের আঞ্চলিক দাবি।

Image Credit : CNN

আইনি ও কূটনৈতিক উন্নয়ন

2013 সালে, ফিলিপাইন চীনের বিরুদ্ধে হেগে Permanent Court of Arbitration (PCA) আদালতে মামলা দায়ের করে, যা চীনের “Nine-Dash Line” মানচিত্রের ভিত্তিতে বিস্তৃত দাবির চ্যালেঞ্জ করে। 2016 সালে, PCA ফিলিপাইনের পক্ষে রায় দেয় এবং আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন সংম্মেলন (UNCLOS) অনুযায়ী চীনের দাবিকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে, চীন এই রায় প্রত্যাখ্যান করে এবং অঞ্চলটিতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

Nine Dash Line Image Credit : ThePrint

সামরিক সংঘর্ষ ও উত্তেজনা

বছরের পর বছর ধরে, বেশ কিছু ঘটনা উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। চীনা জাহাজগুলি প্রায়শই ফিলিপাইনি নৌকাগুলির বিরুদ্ধে ধাক্কা দেওয়া, বাধা দেওয়া এবং জল কামান ব্যবহারের মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এই আক্রমণাত্মক কৌশলগুলি চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিপাইনের প্রবেশাধিকার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।

দ্বিতীয় থমাস শোল একটি উল্লেখযোগ্য উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে ফিলিপাইন একটি পুরনো নৌজাহাজে সৈন্য মোতায়েন করে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে। চীন নিয়মিতভাবে এই পোস্টে সরবরাহ মিশনগুলোকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, যা বিপজ্জনক সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সাম্প্রতিক উত্তেজনা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সংঘাত আরও শত্রুতাপূর্ণ ঘটনাগুলির সাক্ষী হয়েছে। 2023 সালের নভেম্বরের সংঘর্ষ, যেখানে ফিলিপাইনি সৈন্যরা খালি হাতে চীনা কোস্ট গার্ডের তলোয়ার ও ছুরি-সজ্জিত সদস্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, উত্তেজনার ক্রমবর্ধমানতা প্রদর্শন করে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে অবৈধ কার্যক্রম ও উস্কানির অভিযোগ করে।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব

দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের উপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফিলিপাইনকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ এবং তারা চীনের দাবিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে নেভিগেশন স্বাধীনতা অভিযান চালিয়েছে, যা সংঘাতের আরেকটি স্তর যোগ করে। বৃহত্তর সংঘর্ষের সম্ভাবনা বিদ্যমান, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্বার্থকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

উপসংহার

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন-ফিলিপাইন সংঘাত এখনও অমীমাংসিত, যা আইনি, কূটনৈতিক এবং সামরিক বিভিন্ন দিক দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও উত্তেজনা এড়াতে এবং আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করতে সতর্কতার সাথে পরিচালনার প্রয়োজন।

More – রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর

Leave a Comment